Monday, September 22, 2025

Top 5 This Week

Related Posts

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট গভীরতর, আন্তর্জাতিক সহায়তা না এলে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট দিন দিন গভীরতর হচ্ছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর লাখো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সতর্ক করেছেন যে, এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থী বহন করার মতো আর্থিক ও সামাজিক সক্ষমতা বাংলাদেশে নেই। আন্তর্জাতিক সহায়তা দ্রুত না এলে একটি বড় মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট ও আন্তর্জাতিক সহায়তার অভাব
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট গভীরতর

আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে আসছে

প্রথমদিকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক দাতারা বিপুল পরিমাণ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সহায়তা কমে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) বারবার জানিয়েছে যে, তাদের অর্থায়ন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশ সরকার বারবার বলেছে, এই সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতি নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

কক্সবাজারে জীবনের বাস্তবতা

কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে রোহিঙ্গারা বাস করছে। সেখানে পরিষ্কার পানি, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শিশুদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম সীমিত, আর কিশোর-কিশোরীরা অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

শিবিরের ভেতর অপরাধ চক্র, মাদক ও মানবপাচারও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর কারণে তাদেরও জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেই দেশটি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, জাতীয় বাজেট থেকে অতিরিক্ত ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন— “বাংলাদেশ যতটুকু করেছে, তার বেশি আর সম্ভব নয়। এখন আন্তর্জাতিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।”

আন্তর্জাতিক মহলের করণীয়

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়। শুধু সাহায্য নয়, রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং বাংলাদেশে আশ্রিত জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই সহায়তা পরিকল্পনা করতে হবে।

স্থানীয় জনমতের প্রতিক্রিয়া

কক্সবাজারের অনেক স্থানীয় মানুষ অভিযোগ করছেন, তাদের কর্মসংস্থান, বনজ সম্পদ, জমি ও পানির ওপর ব্যাপক চাপ পড়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই সংকট সামাজিক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।

তবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্থানীয়রা এখনো সহানুভূতিশীল। তারা চান রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যাক।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি

যদি সহায়তা দ্রুত না আসে, তবে খাদ্য সংকট, রোগব্যাধি ও শিশু মৃত্যুর হার আরও বাড়তে পারে। একইসঙ্গে মানবপাচার, সহিংসতা ও অপরাধ বেড়ে সমাজ অস্থিতিশীল হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট তৈরি হবে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট

বাংলাদেশ ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিন্তু একা এত বড় সংকট সামলানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট এখন শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার বড় হুমকি।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট আরও গভীর হবে— যা এড়ানো গেলে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক বিপর্যয়গুলোর একটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Popular Articles